Saturday, February 6, 2016

জিকা ভাইরাস কি ?



অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত শুধু ব্রাজিলে ৪০ হাজারের বেশি শিশু ‘ছোট মাথা’ নিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দক্ষিণ আমেরিকায় ভয়াবহ আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ‘জিকা ভাইরাস’। গত বছর ব্রাজিলে নতুন করে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মেলার পর মাত্র চার মাসের মধ্যে বার্বাডোজ, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ডমিনিকান রিপাবলিক, ইকুয়েডর, এল সালভাদর, ফ্রেঞ্চ গিনি, গুয়াতেমালা, গুয়াদেলোপ, গায়ানা, হাইতি, হন্ডুরাস, মেক্সিকো, পানামা, প্যারাগুয়ে, পুয়ের্তো রিকো, সুরিনাম ও ভেনিজুয়েলাসহ দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকার ২৪টি দেশ ও অঞ্চলে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে দ্য প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশন। সম্প্রতি যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও জিকা ভাইরাস প্রবেশ করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ।
সর্বশেষ ভারতের পশ্চিমাঞ্চল বিশেষত দেশটির কর্নাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরু ও পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় শহরগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বেঙ্গালুরুর চিকিৎসকরা বলছেন, এখান থেকে অনেক মানুষ দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণ করছেন। আর দক্ষিণ আমেরিকায় ইতোমধ্যেই ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে জিকা ভাইরাস। সে কারণে বেঙ্গালুরুসহ পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় শহর ঝুঁকিপূর্ণ। বেঙ্গালুরু থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব খুব বেশি নয়। কিন্তু জিকা ভাইরাসের প্রতিকার বা প্রতিরোধের বিষয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য তেমন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, জিকা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই।
এর আগেও ইবোলা ভাইরাসের আক্রমন দেখা দেয়ার সময় বাংলাদেশে যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। এবারো নেয়া হয়েছে। তাই এ ভাইরাস সম্পর্কে আতংকিত হবার কিছুই নেই। এ ব্যাপারে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, এই ইস্যুতে এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে আগামীকাল মিটিং আছে। সেখানে কিছু সুপারিশ আসতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা কর্মরত। তাদের কারো মাধ্যমে যদি এ ভাইরাস দেশে ঢুকে পড়ে? এর জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কালকের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। নবজাতকদের উপর আমাদের নজর রাখতে হবে। তবে আপাতত: আমাদের মশা থেকে দূরে থাকতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। জিকা ভাইরাসের বাহক এডিস এজিপ্টি মশা।
এছাড়া যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ছে এ ভাইরাস। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের জেলাগুলোতে এডিস মশা বিস্তার রয়েছে। এছাড়া কোনো অভিবাসীর শরীর থেকে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায়না। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ কি হওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক চিকিৎসক ও গবেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জিকা ভাইরাস যেহেতু খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সেহেতু এ ক্ষেত্রে সজাগ হওয়া জরুরি।
বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে এ ব্যাপারে দেশব্যাপী সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়ার সময় এসেছে। অভিবাসী বিশেষ করে জিকা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে যেসব অভিবাসী দেশে ফেরত আসবেন তাদের রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে। আর পাহাড়ী অঞ্চলগুলোতে মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে জোড়ালো উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।  মশাবাহিত এ রোগ মোকাবেলায় এরই মধ্যে দুই লাখ সেনা নামিয়েছে ব্রাজিল। সতর্কতায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে। কলম্বিয়া, ইকুয়েডরসহ বেশ কয়েকটি দেশে দম্পতিদের ‘গর্ভধারণ’ পেছানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ারিতে শঙ্কায় পড়েছে চলতি বছরের অলিম্পিকও।
পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডার অতি পরিচিত জিকা (স্থানীয় ভাষায় ‘বাড়ন্ত’) বনাঞ্চলে ১৯৪৭ সালে প্রথম এ ভাইরাসের সন্ধান মেলে। রকফেলার ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে উগান্ডা, আমেরিকা ও ইউরোপের বিজ্ঞানীরা ওই বনে তখন ‘পীত জ্বর’ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। গবেষণার এক  পর্যায়ে দুর্ঘটনাবশত’ বানরের দেহে নতুন এক অণুজীবের খোঁজ পান বিজ্ঞানীরা, যার নাম দেওয়া হয় ওই বনেরই নামে।
সন্ধান পাওয়ার সাত বছর পর নাইজেরিয়ায় প্রথম মানবদেহে এ ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোতে। এরপর দীর্ঘ সময় পরপর দুই দফায় এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে এশিয়া ও মাইক্রোনেশিয়া অঞ্চলে। অবশ্য কখনোই এ রোগ এবারের মতো হুমকি হয়ে আসেনি।

No comments:

Post a Comment